আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেল যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইংরেজ আমল থেকেই সিলেট এর সঙ্গে দেশের অন্যান্য প্রান্তের ট্রেন যোগাযোগ বিদ্যমান ছিল। এক সময় এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান যাতায়াতের মাধ্যম ছিল ট্রেন। সুরমা নদীর দক্ষিণ পাশে খোজার খোলা মৌজায় সিলেট রেল স্টেশনের অবস্থান। বছর কয়েক পূর্বে পুরাতন রেল স্টেশনের পাশেই একটি নতুন এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত রেল স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশে যে আধুনিক রেল স্টেশন আছে তার মধ্যে সিলেট অন্যতম। প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রাম এর সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগ বিদ্যমান। তুলনামূলকভাবে কম ভাড়া এবং নিরাপদ ভ্রমণের কারণে সকল শ্রেণীর যাত্রীর পছন্দের বাহন হিসাবে ট্রেন বিবেচিত হয়ে আসছে।
সিলেট হতে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন (কালনী এক্সপ্রেস সকাল ৬.৪০ মিনিটে, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস সকাল ৮.২০ মিনিটে, পারাবত এক্সপ্রেস দুপুর ৩.০০ মিনিটে, উপবন এক্সপ্রেস রাত ১০.০০ ঘটিকায়) এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রাম এর উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ২টি আন্তঃনগর ট্রেন (পাহাড়িকা এক্সপ্রেস সকাল ১০.১৫ মিনিটে, উদয়ন রাত ৯.২০ মিনিটে) গন্তব্য ত্যাগ করে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি মেইল ও লোকাল ট্রেন রয়েছে যা দিয়ে কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল, বাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব, নরসিংগী, টংগী, ঢাকা এয়ারপোর্ট, কুমিল্লা, ফেনী ইত্যাদি স্থানে গমন করা যায়।
রাজধানী ঢাকা হতে সিলেটের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন (পারাবত সকাল ৬.৪০ মিনিটে, জয়ন্তিকা ২.০০ ঘটিকায়, কালনি ৩.০০ ঘটিকায়, উপবন ৯.৫০ মিনিটে) এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রাম হতে সিলেটের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন (পাহাড়িকা সকাল ৮.০০ মিনিটে, উদয়ন রাত ৯.০০ মিনিটে) যাতায়াত করে।
ট্রেনের সিডিউল এবং ভাড়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
ট্রেন ভাড়ার হার:
|
আলী আমজাদের ঘড়ি: কীন ব্রীজের পাশেই চাঁদনীঘাটে রয়েছে সিলেটের আরেক ঐতিহ্য আলী আমজাদের ঘড়ি। কীন ব্রিজ থেকে নীচের দিকে তাকালে, চাঁদনী ঘাটের কাছেই চোখে পড়ে আলী আমজাদের ঘড়ি। উনবিংশ শতকের একটি স্থাপনা, যা মূলত একটি বিরাটাকায় ঘড়ি, একটি ঘরের চূড়ায় স্থাপিত। কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালীপনা আর অবহেলায় সিলেটের এ প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন ঘড়িঘরটি এখন অচল অবস্থায় পড়ে আছে। ঘড়িটি নির্মিত হয় ১৮৭৪ সালে। সে সময় তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থ ব্রুক সিলেট সফরে এলে তার সম্মানে এ ঘড়ি নির্মাণ করা হয় আলী আমজাদের জমিদারীর তহবিলের অর্থ থেকে। তাই এ ঘড়িটি আলী আমজাদের ঘড়ি হিসেবেই পরিচিত। ঘড়ির ডায়ামিটার আড়াই ফুট এবং ঘড়ির কাঁটা দুই ফুট লম্বা। এ অঞ্চলে যখন ঘড়ির অবাধ প্রচলন ছিল না, মানুষ সূর্যের দিকে তাকিয়ে সময় আন্দাজ করতো, ঠিক সে সময় এ ঐতিহাসিক ঘড়িঘরটি নির্মিত হয়। সে আমলে মানুষজন শহরের প্রবেশপথে স্থাপিত ঘড়িঘরের সময় দেখে শহরে আসা-যাওয়া ও কাজকর্ম সম্পাদন করতেন। লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির এ মনোরম স্থাপত্যশৈলীর পরিচায়ক ঘড়িঘরটি তখন থেকেই আলী আমজাদের ঘড়িঘর নামে পরিচিতি লাভ করে। বিরাট আকারের ডায়াল ও কাঁটা সংযুক্ত সুবিশাল ঘড়িটির ঘণ্টাধ্বনি শহরের বাইরে অনেকদূর থেকেও শোনা যেত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হানাদার বাহিনীর গোলার আঘাতে এই প্রাচীন ঘড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। স্বাধীনতার পর সিলেট পৌরসভা ঘড়িটি মেরামতের মাধ্যমে সচল করলেও কিছুদিনের মধ্যেই ঘড়ির কাঁটা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে আলী আমজদের ঘড়ি মেরামত করে পুনরায় চালু করা হয়। এসময় ঘড়িটি চালু করার পর ঢাকার একটি কোম্পানীর কারিগররা ঘড়িটি চালু রাখার জন্য রিমোট কন্ট্রোলের ব্যবস্থা করে দেয়। পৌর চেয়ারম্যানের অফিসকক্ষ থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ঘড়ির কাঁটা ঘুরতো। কিন্তু দুই-চার বছর যেতে না যেতেই ঘড়ির কাঁটা আবার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সিজান কোম্পানীর দ্বারা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ঘড়িটি পূনরায় চালু করা হয়। কিন্তু বছর না ঘুরতেই ঘড়িটির কাঁটা আবারও বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এই ঘড়িটিকে পূণরায় মেরামত করলে তা আবার দৈনিক ২৪ ঘন্টাব্যাপী সচল রয়েছে।
অবস্থান: সিলেট সার্কিট হাউজ ও ক্বিন ব্রীজ সংলগ্ন।
যোগাযোগ ব্যবস্থা: সিলেট রেলওয়ে স্টেশন অথবা কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হতে ১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে গেলেই ঐতিহাসিক আলী আমজাদ ঘড়িটির অবস্থান।
ভাড়া: পর্যটকরা রিক্সা অথবা সিএনজি যোগে যেতে পারেন। ভাড়া ৩০-৫০/- টাকা।
ঘড়ি ঘরের পরিমাপ নিম্নরূপ:
দৈর্ঘ্য: ৯ ফুট ৮ ইঞ্চি
প্রস্হ: ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি
নীচ থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা: ১৩ ফুট
ছাদ থেকে ঘড়ি অংশের উচ্চতা: ৭ ফুট
ঘড়ির উপরের অংশের উচ্চতা: ৬ ফুট
মোট উচ্চতা: ২৬ ফুট
সিলেটেরপরিচিতিতে বহুল প্রচলিত এমন লোকগাঁথা। সিলেট নগরীর শেখঘাটে কাজীর বাজারেরদক্ষিণ সড়কের ধারে ১ দশমিক ৩৬৫ একর ভুমি জুড়ে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জিতুমিয়ার বাড়ি। চুন সুরকি দিয়ে নির্মিত মুসলিম স্থাপত্য কলার অনন্য নিদর্শনএ দালানটি নির্মাণ খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়া।১৮৯১সালে এ বাড়ির সামনের দালানটিনির্মাণ করা হয়। বর্তমান কাজিরবাজার গরুর হাট ছিল কাজিদের মূল বাড়ি। ১৮৯৭সালের ভূমিকম্পে বাড়িটি লন্ডভন্ড হয়ে গেলে বর্তমানে জায়গায় বাড়িটিস্থানান্তরিতহয় ।
খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদএহিয়া ওরফে জিতু মিয়া(১৮৫১-১৯২৫) প্রথম জীবনে কিছু দিন সাব রেজিস্টারছিলেন। পরে তিনি এই চাকরি ছেড়ে দেন। ১৮৯৭ থেকে ১৯০৩ সাল পযর্ন্ত তিনি সিলেটপৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন, ছিলেন অনারারী ম্যাজিস্টেটও । জিতু মিয়ারপরিবারের জাকঁজমক চলাফেরা ও বিলাসী জীবন যাত্রা ছিল সে কালের এক অন্যতমআলোচিত বিষয়। কথিত আছে জিতু মিয়ার পরিবারে ১২২টি চুলোয় রান্নাবান্না হতো ।প্রতিদিন জরুরী প্রয়োজনে গ্রাম থেকে শহরে আসা শত শত লোক জিতু মিয়ার বাড়িতেআতিথেয়তা গ্রহণ করতেন।
খাঁন বাহাদুর জিতু মিয়ার প্রথমস্ত্রী ছিলেন তার চাচা মাওলানা আব্দুল রহমানের মেয়ে সারা খাতুন। সারাখাতুনের অকাল মৃত্যুতে ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা রসুল বক্সের মেয়েকে তিনিদ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ স্ত্রীও অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের ঘরে কোনোসন্তান সন্তনি ছিল না। তবে পরবর্তীতে জিতু মিয়ার আরওবিয়ে করেছিলেন বলেজানা যায়। সে সব স্ত্রীর ঘরে তার বহু সন্তান সন্ততি রয়েছে। কিন্তুদুরদর্শী জিতু মিয়া তার জমিদারি ও বিশেষ করে আলীশান বাড়িটির অস্তিত্বচিরদিন অক্ষত রাখান লক্ষ্যে মৃত্যুর আগে ১৯২৪ সালে নিজেকে নিঃসন্তান উল্লেখকরে তৎকালীন আসাম সরকারের অনুমোদন নিয়ে তারঁ যাবতীয় সম্পত্তি ওয়াকফকরেন। কে বি এহিয়া ওয়াকফ এস্টেট নামে এস্টেট এর মোতাওয়াল্লি নিযুক্ত হনতৎকালীন জেলা প্রশাসক। পরবর্তীতে সিলেট বিভাগে উন্নীত হলে বিভাগীয় কমিশনারপদাধিকার বলে এ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি নিযুক্ত হন। ইতিহাস ঘেটে জানা গেছে, মৌলভী আবু নছর মোহাম্মদ ইদ্রিছ কাজী হয়ে সিলেট আসেন নবাবী আমলে। সুরমানদীর তীরে তারঁ বিচারালয়কে কেন্দ্র করে তৎকালীন সময়ে গড়ে উঠে একটি গঞ্জ।লোকজন একে খানবাহাদুর গঞ্জ বাজার বলে ডাকতো। তার মৃত্যু পর তার পুত্রমাওলানা আবু মোহাম্মদ আবদুর কাদির ও মাওলানা আবুল হোসাইন মোহাম্মদ আব্দুররহমান তাদের বিশাল জায়গীরকে কেন্দ্র করে জমিদারি এস্টেট গড়ে তোলেন কে বিএহিয়া ওয়াকফ
এস্টেটথেকে বিভিন্ন সমাজ সেবা মুলক কাজ , ধর্মীইয় কাজ,শিক্ষা মুলককাজে অনুদান ,দান ও বৃত্তি প্রদান করাহয় । উল্লেখ যে খানবাহাদুর তার সম্পত্তির ৬০% সমাজ সেবা ,ধর্মিয় কাজ , শিক্ষা মুলককাজেদান করে গেছে ন। । সিলেট সার্কিট হাউস গঠনের আগে খান বাহাদুরের বসত বাড়ি“জিতু মিয়ার বাড়ি” “এহিয়া ভিলা” "সাব বাড়ি" , "কাজি বাড়ি"তেউপমহাদেশের খ্যাতনামা নেতৃবৃন্দ – মহাত্মা গান্ধী , ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ,ভারতের সাবেক রাষ্টপতি জনাব ফখরুউদ্দিন আলি আহমেদ, আসামের সাবেক গভর্নরস্যার সাদ উল্লাহ ,ভারতের সাবেক আই সি এস খান বাহাদুর গজনফর আলি, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্তী খাজা নাযিম উদ্দিন , মজলুম নেতা আব্দুলহামিদ খান ভাষানী ,রাজনিতিবিদ ফরিদপুরের লাল মিয়া, মোহন মিয়া , উপমহাদেশেরখ্যাতনামা আলেম দীন মওলানা হসসাইন আহমেদ মাদানি, মাওলানা সহুল আহমেদউসমানী, ফরায়েজি আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ হাজী শরিয়াত উল্লাহর উত্তরসূরীবাদশা মিয়া, পীর মুসলে উদ্দিন,দুদু মিয়া, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আম এম এজি ওসমানী, সহ উপমহাদেশের নামকরা ব্যাক্তি রা এই বাড়িতে থেকেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক করেচেন, বহু সভা সম্মেলন করেছেন। ব্রিটিশ-পাকিস্তান সময়েসিলেট তথা উপমহদেশের রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্র ছিল এই বাড়ি ।
বর্তমান অবস্থা বাড়ীটির মুল কক্ষটি ড্রয়িং রুম হিসেবে ব্যবহৃৎ হতোযেখানে রয়েছে জিতু মিয়ার সংগৃহিত ক্যালিওগ্রাফি করা পবিত্র কুরআন ওহাদিসের বাণী। এই কক্ষের ডান দিকের অপর একটি কক্ষে রয়েছে একটি লম্বা কালোটেবিল ও ২০টি চেয়ার, যা তৎকালীন সময়ে সভা কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃৎ হতো।
বাড়ির ভিতর এ র অংশে আছে ৮ টি বসত ঘর যাতে জমিদার বংগশের বসবাস করেন।তাদের অনেকেই নিজ নিজ যায়গায় দেশে বিদেশে সুনাম রাখছেন । বর্তমানে নানাকারনে এই বাড়ির ইতিহাস সবার নজরের বাহিরে চলে যাচ্ছে । আমি এই ঐতিহাসিকবাড়ির একজন সদস্য হিসাবে গর্বিত । এই বাড়ির মানুষের বসবাসের বিঘ্ন, এবংতাদের ব্যাক্তিগত জীবনে বিঘ্ন না করে যেভাবে এই বাড়িরইতিহাস তুলে ধরা যায়তাই করা উচিত।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস